7 April 2011

মানুষ বড় কাঁদছে,বড় বিপন্নঃ সামনে লড়াই,জিততেই হবে

অনুনয় চট্টোপাধ্যায় 




“শক্তি পূজার প্রধান অঙ্গ বলিদান। সেই বলির রক্তে পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে।”আজ থেকে নব্বই বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের আবহের মধ্যে দাঁড়িয়ে এই অশ্রু মেশানো অনুভব ব্যক্ত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সবুজপত্র-এর সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীকে। পৃথিবী জুড়ে মানুষের পোড়া গন্ধ তখনও রোমাঁ রোঁলা,আঁরি বারবুস,ম্যাস্কিম গোর্কি প্রমুখকে বিচলিত করে রেখেছে, কেননা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভাগ বাটোঁয়ারার মধ্যেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা ওৎ পেতে আছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “সে (জার্মান)বলিতেছে আমার জন্য যদি পাত পাড়া না হইয়া থাকে আমি নিমন্ত্রণ পত্রের অপেক্ষা করিব না আমি গায়ের জোরে যার পাই তার পাত কাড়িয়া খাইব।”অন্যত্র একটি প্রবন্ধে দার্শনিক কবি বলেছেন,“খেজুর গাছ তাল গাছ বিধাতার দান,তাড়িখানা মানুষের সৃষ্টি। তালগাছকে মারিলেই নেশার মূল মরে না। যন্ত্রের বিষদাঁত যদি কোথাও থাকে,তবে সে আছে আমাদের লোভের মধ্যে।” এই লোভের কামড় আজ নানা রূপে নানা বেশে সারা বিশ্বে পরিব্যপ্ত। রক্তাক্ত আফগানিস্তান,ইরাক,ইরান,প্যালেস্তাইন- হাজার হাজার টন বোমার আঘাতে শ্মশানভূমি সেই সব দেশ। সারা বিশ্বে সন্ত্রাস,কার বিরুদ্ধে কার সন্ত্রাস যুক্তি বুদ্ধির সীমায় ধরা পড়ছেনা। কে যোগাচ্ছে এত মারণাস্ত্র,এত অর্থ অসামরিক মানুষের হাতে। এরা কখনও ইসলামের নামে জেহাদি,কখনও খ্রীষ্টের নামে হন্তারক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্রমান্বয়ে ইউরোপ থেকে লোভের শ্যেন দৃষ্টি এশিয়াভূমির উপর নিবদ্ধ হচ্ছে। ভিয়েতনামের আগুন নিভতে না নিভতে সারা এশিয়া জুড়ে হিংসার আগুন,সন্ত্রাসের চোরাগুপ্ত হত্যালীলা। লোভের নতুন শৈলী। সন্ত্রাসের ধর্মীয় নামাবলীর আস্তিনের নীচে রাজনীতির মারণাস্ত্র। ফলশ্রুতি, সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষের কান্না,অবিরত চোখের জল।

আমাদের স্বদেশ। সেখানেও হাহাকার,মায়ের কান্না, স্ত্রীর সীমন্ত মুছে যাওয়া,শিশুর বোবা বিহ্বল বিস্ফারিত চোখ- আমাদের মনুষ্যত্ব,আমাদের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমে মুম্বাই থেকে পুবে অসম,উত্তরে দিল্লী,কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে হায়দ্রাবাদ- জঙ্গি হানায়,বোমা বিস্ফোরণে জনপদে রক্তের স্রোত,মৃত্যুর মিছিল। কারা ঘটায় এসব? আমরা কি চিনি এদের? কী চায় এরা? রাষ্ট্র কি এদের জানে,এদের চেনে,সমাধান হয় না কেন? কোন পথে এসবের সমাধান কেউ জানে না। এসবের শিকড় নাকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও,প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির পরষ্পরের উপর দোষারোপ,কূটনীতির চালাচালি,মাঝে মাখে সমরাস্ত্র প্রয়োগের বিনিময়। বছরের পর বছর জারি থাকে উত্তেজনা,বিভিন্ন নামের আড়ালে সন্ত্রাস।

অন্তঃরাষ্ট্র,বহিঃরাষ্ট্র সন্ত্রাস,জঙ্গি হানার সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়া মাওবাদী সন্ত্রাস,নতুন ইউনিফর্ম,গায়ে লেখা শ্রেণীযুদ্ধ,বিপ্লব,শোষণ, মুক্তি ইত্যাদি। সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র এদের হাতে। পাঁচ-ছয়টি রাজ্যে এরা সর্বশক্তিমান রাষ্ট্রীয় শক্তিকে কোণঠাসা করতে সচেষ্ট। সকালের খবরের কাগজ বা দূরদর্শনের চ্যানেলে চোখ রাখলেই শিউরে উঠতে হয়। নিহত মানুষের বিচিত্র নিথর শরীর। গুলিবিদ্ধ বুকে শুকানো রক্তের মানচিত্র,মাছি ভনভন করছে,গলার নলিতে আততায়ীর নৃশংসতা অথবা মাথার খুলিতে ভাঙনের কি আশ্চর্য হিংস্রতা। পাশে শোকে কান্নায় গড়াগড়ি পরিবার পরিজনের আলোকচিত্র। এ চিত্র শুধু বাংলায় নয়,ঝাড়খন্ড,ছত্তিশগড়,অন্ধ্র,অসম,গুজরাট,মুম্বাই সর্বত্র। সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কোথাও ইসলামি,খ্রিস্টানি,হিঁদুত্বের জিহাদ,কোথাও বা মাওবাদী বিপ্লবী জিহাদ। এসবই তো শক্তিপূজার অনিবার্য আচার। মরে যাক ছৌ নাচের শিল্পী, টিনের চাল ছিটে বাঁশের ক্লাসঘরে পাঠদানরত শিক্ষক,মুদির দোকানি,ক্ষেতে চাষরত এক চিলতে জমির মালিক কৃষক,জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ কিংবা কেঁদু পাতা সংগ্রহ করে ফেরা আদিবাসী মজুর। খুনির ছুরি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নিয়েছে এদের প্রাণ। হয়তো তিনদিন ধরে জঙ্গলের সীমানায় খাটিয়ায় পড়ে আছে তার নিথর দেহ,শেষকৃত্য অপেক্ষা করে থাকে এইসব নিতান্ত গরীব মানুষদের। এরা নাকি শ্রেণিশত্রু। দুবেলা পেটভরে সপরিবারে খাওয়াও জোটে না হয়ত। বৌ-বাচ্চার সামনেই তার শরীরে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে মা-মাটির বুলেটের দানা।

প্রতিদিনের মৃত্যুমিছিল। একঘেয়ে হয়ে গেছে,এ সংবাদে আর উত্তেজনা নেই, তাই সংবাদপত্রের প্রথম পাতা সাতের পাতায় চালান হয়ে গেছে। আমরা সামান্য শোকবাক্য উচ্চারণ করতে ভুলে যাচ্ছি। নিরীহ মানুষের অবাঞ্ছিত মরণে মানুষ হয়েও নিশ্চুপ থাকা অভ্যাস করছি। স্বাভাবিক শোকের বর্ণমালাও ভুলেছি আমরা। আমাদের স্বভূমিতে এখন লাশকাটা ঘরের নিস্তব্ধতা। চতুর্দিকে শিয়াল কুকুরের চিৎকার। পশুমূর্তির পায়ে আমাদের অনেকের বিবেক হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে নীরবে, সামান্য একটু উচ্ছিষ্টের লোভে। আমাদের শোকও এখন রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ন্ত্রিত। হায় গণতন্ত্র। তুমি কি আমার শোক উচ্চারণের জিভও ছিড়ে নিতে পার!

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে, সভ্যতাকে বর্বরতার খাটিয়ায় চাপিয়ে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র কাঁধে খুনী-নেতা বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের সংবাদ বিতরণী চ্যানেলে খুন ও হত্যার ন্যায্যতা দাবী করেন সভ্য সমাজের কাছে। পরম আহ্লাদে রাজনৈতিক সমর্থনও পেয়ে যায়,বুদ্ধিজীবিদের বিবেকের ছাড়পত্রও। শহর থেকে বুদ্ধিজীবিরা গিয়ে খুনীদের আশীর্বাদ করে আসেন, অর্থ জোগান দিয়ে আসেন। অবিরাম খুনের স্বপক্ষেও দাঁড়ায় নানা সামাজিক তত্ত্ব, কোনো এক রাজনৈতিক দল বা জননায়কের নামচিহ্ন ধারণ করে। এরাও মানবিক। এদেরও প্রয়োজন শুধু ক্ষমতার সোপানে তরতর করে উঠে আসা কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেদি থেকে চুঁইয়ে পড়া বা উচ্ছিষ্ট ভোজে গা-গতরে ফুলে ফেঁপে ওঠা। শক্তিপূজা ছাড়া ক্ষমতার স্বাদগ্রহণ অসম্ভব।

এই মৃত্যুস্রোতের রক্তাক্ত কাদামাটির মধ্যে দাঁড়িয়ে নির্বিকার থাকবেন প্রসাদভোগী বুদ্ধিজীবিরা। রবীন্দ্রনাথের মত করে আমরা তাহলে বলব,“এরা বসুন্ধরাকে এমন জায়গায় পরষ্পর বখরা করে নিতে চায় যে জায়গাটা যথেষ্ট নরম,অনায়াসেই যেখানে দাঁত বসে,এবং ছিঁড়তে গিয়ে নখে যদি আঘাত লাগে নখ তার শোধ তুলতে পারে।”আমাদের জঙ্গলভূমি, আমাদের শ্রমনিষ্ঠ মানুষের শরীর তেমন বখরা করে নেওয়ার জমি হয়ে উঠল! আমরা তবু নির্বাকই থেকে যাব! মানুষ বিভ্রান্ত! আমাদের রাষ্ট্রের নাম তো ভারতবর্ষ। উন্নয়নের মুখ্য চাবিকাঠি তো সেখানে। স্বাধীনতার ষাট বছর পরেও এতো দারিদ্র, এতো অন্ধকার! ঋণের দায়ে আত্মহননের ভারী সংখ্যা গড়ে তোলেন বেশ কয়েকটি রাজ্যের হতভাগ্য কৃষক। হ্যাঁ আজও। শুধু একটি বা দুটি রাজ্যে পরিবর্তনের জন্য তবে কেন এত রক্তপাত।

যাঁরা দুদিন আগেও নন্দীগ্রামের সময় কেঁদে ভাসিয়েছেন,সেই বুদ্ধিজীবিদের চোখে জল নেই কেন? মানুষ বড় কাঁদছে। চতুর্দিকে শিশুনারীসহ মানুষ পুড়ছে,পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী। এতগুলি মৃতদেহ,প্রায় প্রতিদিন,তাও তাঁদের বিবেকের প্রশান্তিতে এতটুকু কাঁদন আনতে পারেনা। চোখের জল,বিবেকের স্বর,তাও পক্ষপাতের খাত মেনে চলতে শিখেছে। যাঁদের বিবেক এখনও ক্রীতদাস হয়ে ওঠেনি তারা কি করবে এখন? ঘৃণা উচ্চারণ? মনে পড়ছে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক শরহান পামুক-এর ‘স্নো’উপন্যাসখানার শেষ মুহুর্ত। অগণন মৃত্যুর ইতিবৃত্ত,উৎস বর্ণণার পর কথাকার উচ্চারণ করেছেন একেবারে শেষ তিনটি শব্দ- I began to cry। মৃত্যু সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের এই নিষ্ঠুর ভূমিতে দাঁড়িয়ে আসুন আমরা অন্তত কাঁদবার সততাটুকু অর্জন করি। সেই সঙ্গে মানবতার এই শত্রুদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করি।

নৈরাজ্যের এই সর্বময় পরিস্থিতিতে দক্ষিণপন্থী দল,বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি,মাওবাদী নামের সশস্ত্র হিংস্র দল,সুযোগলোভী সোশ্যালিস্ট নামচিহ্ন বহনকারী বামপন্থী দল- এই বহুবর্ণের জোটে যোগ দিয়েছেন একদল বুদ্ধিজীবি। এঁরা যশ,প্রচার অর্থলোভ থেকে এবং কেউ কেউ ব্যক্তিগত অসূয়া থেকে দক্ষিণপন্থী দলের সাথে জোটবদ্ধ হলেন। ‘পরিবর্তন চাই’নিনাদ তুলে হোর্ডিং-এ বিজ্ঞাপিত করে দিলেন নিজেদের মুখপট। বিনিময়ে নগদমূল্যও পেয়েছেন এঁদের অনেকে। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর রেল বিভাগের অধীনে নানা কমিটি,পর্ষদ খুলে এই বুদ্ধিজীবিদের জন্য মোটা টাকার মাসোহারা,দপ্তর,গাড়ি- ইত্যাদি ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নাট্যদল,সংগীত সংস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি দপ্তর থেকে সংগঠিতভাবে কোটি কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে ঢালাও ভাবে। এই রাজ্যে বামপন্থী দল, বামপন্থার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে চালিত করতে,নৈরাজ্যের শক্তিকে বৈধতা দান ও গৌরবান্বিত করতে এই উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিবৃত্তিধারীরা প্রবল ভূমিকা পালন করে চলেছেন। নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন তথাকথিত তৃণমূলী বুদ্ধিজীবি,নাট্যজীবি।  

Bengal Polls: Rightist Intellectuals incube Para-social interaction

Sayon Ganguly













With the assembly polls doing rounds in the state, the Rightist allaince have started it all over again. The prospective candidates, the expected result, the blessings of the mass they would get, and what not. Along with the bifurcating political equations, another thing that has assessed the political situation is the entry of the so called celebrities in the poll drama.

Now, one may wonder what that has got to do with the fate of the assembly polls. Let’s be very clear in a fact that the state is going to witness the most important poll of the millennium. The in-power Left front or the oppositions in the Trinamool Congress, both the groups would try it out to get back to the power lurk once and for all. For most of the parties in the Indian politics, celebrity handling remains one of the major weapons to win the poll match, and West Bengal is no exception to it.

Here too, the Trinamool Congress, who are eyeing to stage to be in the power hunching politics have made it clear that celebrity management is going to be the key affair to register wins in the ballots.

Promoting the para-social interaction mode of communication (unknowingly though), the right parties are trying to win over the people. As communication theorist John Fiske and James Watson puts it, “para-social interaction is the process of communication, directed to the heavy viewers, who can actually relate a star with his next door neighbour.”

That is it. After dramatic success in the last Lok Sabha elections, the Trinamool Congress is now largely trying to sweep away the heavyweight poll battle by presenting a chunk of celebrities. Celebrities, as the adage rightly says, ‘packs and sells a product well’, are going to be the second largest factor in the assembly polls of the state. Incidentally, the party is strategically trying to place them in specific genres.

An intellectually acclaimed celebrity would be a plausible choice for the urban area; while once upon a time film hero (who has produced innumerable melodramatic potboilers in his days) is well going to be the probable candidate in the rural belt. Particularly so, the leader of the oppositions are even making it clear that the para-social interaction is rightly planned.

For the entire write up follow the link: http://www.thescape.in/newsdetail.asp?newsid=2075